একজন দক্ষ ইলেকট্রিশিয়ানের কর্মস্থলে কাজ করার পরিবেশ সম্বন্ধে ধারনা থাকা আবশ্যক। এজন্য তার কাজের পরিধি, কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ ও নিরাপত্তা, টুলস ও মেশিনারি ব্যবহারের নিয়ম-কানুন সম্পর্কে জ্ঞান থাকা বাঞ্চনীয়। একজন কর্মীকে পেশাগত চার্টার ডিউটি, পেশাগত স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা পলিসি, বেসিক সেফটি এবং সিকিউরিটি নীতিমালা ইত্যাদি বিষয়ে অবগত ও সচেতন হতে হবে।
কার্যক্ষেত্রে সতর্কতা: বৈদ্যুতিক কাজে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নিরাপত্তা। যেমন- বৈদ্যুতিক শক একটি ভয়াবহ বিপদ। এই ধরনের বিপদে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশী থাকে। একারনে ইংরেজীতে একটি প্রবাদ আছে- যার বাংলা অর্থ হলো- প্রতিষেধক অপেক্ষা প্রতিরোধ উত্তম’। নিরাপত্তা এবং সঠিক প্রস্তুতি ইলেকট্রিশিয়ানের কাজের পূর্বশর্ত। এছাড়াও দূর্ঘটনা এড়াতে নিরাপদ পোশাক ও সরঞ্জামাদির ব্যবহার নিশ্চত করা জরুরী। তাছাড়া দূর্ঘটনা ঘটলে কোন পরিস্থিতিতে কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে, এ বিষয়ে জ্ঞান ও দক্ষতা থাকতে হবে। অগ্নিনির্বাপন, অক্সিজেন ও প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োগ কৌশল, হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ারসার্ভিস ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে যোগাযোগ দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা :- যেকোন প্রকার প্রতিকুল অবস্থাকে প্রতিরোধের মাধ্যমে নিরাপত্তার সাথে কাজ করাকে অকুপেশনাল হেলথ এন্ড সেফটি অথবা পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বলে।
পেশাগত ঝুঁকি:- পেশাগত ঝুকি বলতে যেকোন একটি নির্দিষ্ট পেশার সাথে যুক্ত ঝুকিসমূহকে বুঝায়, যাহা ব্যক্তির স্বাস্থ্য , নিরাপত্তা এবং সুস্থতার উপর বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে।
অথবা
পেশাগত ঝুকি বলতে এমন কতগুলো সম্ভাব্য বিপদসমূহকে বুঝায় যা ব্যক্তিরা কর্মক্ষেত্রে সম্মুখীন হতে পারে, যা তাদের স্বাস্থ্য , নিরাপত্তা এবং সুস্থতার উপর বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে।
নিরাপত্তার সতর্কতামূলক ব্যবস্থাসুমূহ:-
১. সঠিক নিয়মে মেশিন চালু করতে হবে।
২. কাজ শেষে মেশিন সঠিক নিয়মে বন্ধ করা।
৩. বৈদ্যুতিক সংযোগসমূহ মাঝে মাঝে পরীক্ষা করতে হবে।
৪. দাহ্য পদার্থের আশে-পাশে ওয়েল্ডিং ও গ্রাইন্ডিং না করা।
৫. মানসিক দূর্বলতা, অসুস্ততা, ভয়-ভীতি নিয়ে বৈদ্যুতিক কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৬. বৈদ্যুতিক দূঘর্টনায় আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান সংক্রান্ত জ্ঞান থাকতে হবে।
৭. কার্যক্ষেত্রে যথাযথ সুরক্ষা যেমন- পিপিই ব্যবহার করতে হবে।
৮. দৈবক্রমে আগুন লাগলে দ্রুত ফায়ার স্টেশনে খবর দিতে হবে।
বৈদ্যুতিক দূঘর্টনা সংঘটনের উল্লেখযোগ্য কারনসমূহ:
ক. বৈদ্যুতিক লাইনে সংঘটিত কারনসমূহ: – ১.ওভার লোড ২.শর্ট সার্কিট ৩. আর্থ ফল্ট ৪. ওভার ভোল্টেজ ৫.আন্ডার ভোল্টেজ ৬. স্পার্কি ৭. লুস কানেকশন ৮. লাইটেনিং এন্ড সার্জ ইত্যাদি।
খ.ব্যক্তিগত/মানবীয় কারনসমূহ:
১. বৈদ্যুতিক আইন অমান্য করিলে
২. কাজে অমনোযোগী থাকলে
৩. দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকিলে
৪. ভয়ভীতি ও নার্ভাস অনুভব করার কারনে
৫. অবসাদ বা ক্লান্ত অব¯হায় থাকিলে
৬. কাজে তাড়াহুড়া করিলে
৭. অজ্ঞতা ও বুদ্ধিহীনতার কারনে
৮.অতিরিক্ত সাহসিকতা দেখাতে গিয়ে
৯. নিউট্রালে সুইচ লাগালে
১০. বৈদ্যুতিক লাইনে কেউ কাজ করছে কিনা, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়ে বিদ্যুত সরবরাহ দিলে
১১. লাইনে বিদ্যুৎ আছে কিনা সেই ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়ে বৈদ্যুতিক লাইন স্পর্শ করলে
১২. বৈদ্যুতিক লাইনে কাজ করার সময় হেলমেট, এপ্রোন, সেফটি বেল্ট, গগলস ইত্যাদি পরিধান করে কাজ না করলে।
গ. যান্ত্রিক ত্রুটির কারনসমূহ:
১. ত্রুটিপূর্ন যন্ত্রপাতি ও মালামাল ব্যবহার করার কারনে
২. রক্ষন ও নিয়ন্ত্রন কারী যন্ত্রপাতি ত্রুটিপূন হওয়ার কারনে
৩. বৈদ্যুতিক মেশিন, যন্ত্রপাতি কিংবা চলমান যন্ত্রপাতি গুলো যথাযথভাবে আর্থিং করা না থাকলে
৪. পরিবাহী তারের ইনসুলেশন খারাপ হলে
৫. ঘূর্ণায়মান মেশিনে কভার না থাকলে।
বৈদ্যুতিক দূঘর্টনার ফলাফল বা ক্ষতিসমূহ:
১. হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে
২. শরীরে কারেন্ট প্রবাহের ফলে মাংসপেশী, নার্ভ ও টিস্যু ধ্বংস হতে পারে
৩. বৈদ্যুতিক উৎসের সাথে লাগার কারনে শরীরের ঐ অংশ তাপের কারনে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে
৪. বৈদ্যুতিক শর্কের কারনে পড়ে গিয়ে আঘাত প্রাপ্ত হতে পারে
৫. আর্কের কারনে আল্টা-ভায়োলেট রশ্নিতে চোখের দৃষ্টি হারাতে পারে
৬. আর্কের কারনে শ্রবণ শক্তি হারাতে পারে।
বৈদ্যুতিক দূঘর্টনার প্রতিকারসমূহ:
১. বৈদ্যুতিক আইন অমান্য করা যাবে না
২. বৈদ্যুতিক লাইনে কাজ করার সময় মনোযোগী থাকতে হবে
৩. দুশ্চিন্তা নিয়ে বৈদ্যুতিক লাইনে কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে
৪. ভয়ভীতি ও নার্ভাসনেস নিয়ে বৈদ্যুতিক লাইনে কাজ করা যাবে না
৫. অবসাদ বা ক্লান্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক কাজ করা থেকে দূরে থাকতে হবে
৬. কাজে তাড়াহুড়া করা যাবে না
৭. অজ্ঞতা ও বুদ্ধিহীনতা পরিহার করতে হবে
৮.অতিরিক্ত সাহসিকতা দেখানো যাবে না
৯. নিউট্রালে সুইচ ন লাগিয়ে ফেজ তারে লাগাতে হবে
১০. বৈদ্যুতিক লাইনে কেউ কাজ করছে কিনা, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে বিদ্যুত সরবরাহ দিতে হবে
১১. লাইনে বিদ্যুৎ আছে কিনা সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে বৈদ্যুতিক লাইন সতর্কতার সাথে স্পর্শ করতে হবে
১২. বৈদ্যুতিক লাইনে কাজ করার সময় হেলমেট, এপ্রোন, সেফটি বেল্ট, গগলস ইত্যাদি পরিধান করতে হবে।
১৩. ত্রুটিপূর্ন যন্ত্রপাতি ও মালামাল পরিহার করতে হবে
১৪. সঠিক মানের রক্ষন ও নিয়ন্ত্রনকারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হবে
১৫. বৈদ্যুতিক মেশিন, যন্ত্রপাতি কিংবা চলমান যন্ত্রপাতিগুলো যথাযথভাবে আর্থিং করে নিতে হবে
১৬. সঠিক ইনসুলেশন যুক্ত তার ব্যবহার করতে হবে।
বৈদ্যুতিক দূঘর্টনায় আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে করনীয় সমূহ:
ক.দূর্ঘটনায় কবলিত ব্যক্তিকে উদ্ধার:
১. বিদ্যুৎ আহিত ব্যক্তিকে প্রথমে স্পর্শ করা যাবে না
২. বিদ্যুৎ লাইনে সংযুক্ত অবস্থায় থাকলে বিদ্যুৎ প্রবাহ বা মেইন সুইচ বন্ধ করে বিদ্যুৎ আহিত ব্যক্তিকে লাইন থেকে মুক্ত করতে হবে।
৩. মুক্তকরনের কাজে শুষ্ক ইনসুলেটেড পদার্থ যেমন-কাঠের টুকরা, রশি, শুকনা কাপড় রাবার গ্লোভস ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪. কোন অবস্থাতে চালু লাইন হতে বিদ্যুৎ আহিত ব্যক্তিকে ধাতব পদার্থ বা ভেজা কোন কিছু দিয়ে ধরা যাবে না।
৫. যদি অবস্থা এমন হয় যে, বিদ্যুৎ লাইন এর প্রবাহ বন্ধ করা যাচেছ না তাহলে শুকনা বা ইনসুলেটেড পদার্থ যেমন- কাঠ, রাবার বা প্লাস্টিকের উপর দাড়িয়ে আহিত ব্যক্তিকে ধাক্কা দিয়ে লাইন থেকে মুক্ত করে নিতে হবে।
খ.দূর্ঘটনায় কবলিত ব্যক্তিকে প্রাথমিক চিকিৎসা:
১. বিদ্যুৎ আহিত ব্যক্তিকে বিদ্যুৎ লাইন হতে সরিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হবে
২. বিদ্যুৎ আহিত ব্যক্তির পালস ও শ্বাসক্রিয়া চলছে কিনা নিশ্চিত হতে হবে
৩. শ্বাসক্রিয়া না চললে কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় শ্বাসক্রিয়া চালু করার ব্যাবস্থা করতে হবে
৪. হৃদপিন্ডের স্পন্দন পাওয়া না গেলে বুকের উপর হালকা চাপ দিতে হবে
৫. কোন অবস্থাতে আক্রান্ত ব্যক্তিকে একা রেখে কোথাও যাওয়া যাবে না, বরং আক্রান্ত ব্যক্তিকে শুকনা ও আরামদায়ক স্থানে রাখতে হবে। তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করতে হবে।
গ.দূর্ঘটনায় কবলিত ব্যক্তিকে ডাক্তরী চিকিৎসা:
বিদ্যুৎ আহিত ব্যক্তিকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে প্রয়োজনে দ্রুতডাক্তারের কাছে নেওয়ার ব্যাবস্থা করতে হবে এবং ডাক্তারী পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে
ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জামসমূহ:
কর্মস্থলে কার্যাবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সম্ভাব্য ক্ষতি বা দূর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নিম্নলেখিত নিরাপত্তা সরঞ্জামগুলি ব্যবহারের গুরুত্ব অপরিসীম:-
১. চক্ষু সুরক্ষাকারী বা সেফটি গগলস
২. কানের প্লাগ
৩. মাস্ক
৪. হ্যান্ড গ্লোভস বা হাত মোজা
৫. সেফটি স্যু
৬. অ্যাপ্রোন
৭. হেলমেট
৮. সেফটি বেল্ট
প্রয়োজনীয় প্রশ্নোত্তর:-
অতি সংক্ষিপ্ত:
১. ওএইচএস এর পূর্ণ নাম লেখ।
২. পিপিই এর পূর্ণ নাম লেখ।
৩. হ্যাজার্ড কি?
৪. সরকারি চাকুরিতে নুন্যতম বয়স কত হওয়া প্রয়োজন?
সংক্ষিপ্ত:
১. কোনো কারখানায় দূর্ঘটনা ঘটার ৫টি কারন লেখ।
২. পেশাগত ঝুঁকি বলতে কি বুঝায়।
৩. নিরাপত্তার ৫টি সর্তকতামূলক ব্যবস্থার উল্লেখ কর।
৪. চার্টার অফ ডিউটি বলতে কি বোঝায়।
৫. পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বলতে কী বোঝায়।
৬. ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জামগুলোর নাম লেখ।
রচনামূলক:
১. দূর্ঘটনার ক্ষতিগুলো বর্ণনা কর?
২. দূর্ঘটনা সংঘটনের কারন ও প্রতিকারগুলো ব্যাখ্যা কর।
৩. জরুরী প্রস্থান পদ্বতি ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন কর।