ইঞ্জিনিয়ারিং টুলস এর মধ্যে ইলেকট্রিক্যাল টুলস সবচেয়ে সাধারন এবং সহজ গঠন। ঘর-বাড়ি, অফিস-আদালত, দোকান-পাট ও শিল্প-কারখানা সহ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক লাইটিং এবং ওয়্যারিং এর জন্য একটি স্ক্রু ড্রাইবার নিয়ন টেস্টার ও প্লায়ার্স বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও ব্যবহৃত ইলেকট্রিক্যাল লোড-সমূহ যেমন:- লাইট, ফ্যান, মটরসহ অন্যান্য হোম এ্যাপ্লায়েন্স এর মধ্যে ক্রুটি দেখা দিলে বিভিন্ন ধরনের হ্যান্ড টুলস পাওয়ার টুলস এবং পরিমাপক যন্ত্রের প্রয়োজন হয়। এছাড়া কোন কিছু পরিমাপের জন্য মেজারিং টুলস প্রয়োজন হয়। কাজের সুবিধার জন্য ভাল মানের টুলস ক্রয় করার গুরুত্ব অপরিসীম।
ইলেকট্রিশিয়ান হ্যান্ডটুলস এর সংজ্ঞা:– হ্যান্ডটুলস এর অর্থ হাত দিয়ে কাজ করার সময়ে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি। যে সমস্ত টুলস ব্যবহার করে দৈহিক শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে কারিগরি কর্মক্ষেত্রে কাজ সহজভাবে সমাধা করা যায় তাদেরকে হ্যান্ডটুলস বলে। ইলেকট্রিক্যাল কর্মকান্ডে একজন ইলেকট্রিশিয়ান যে সমস্ত টুলস ব্যবহার করে কাজ সমাধা করে সেগুলিকে ইলেকট্রিশিয়ান হ্যান্ডটুলস বলে।
সাধারন হ্যান্ডটুলস এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা: হ্যান্ডটুলস ছাড়া শুধু হাত দিয়ে কোন কাজ সুন্দর, সঠিকভাবে করা যায় না। বৈদ্যুতিক কাজে একজন ইঞ্জিনিয়ার বা দক্ষ ইলেকট্রিশিয়ান তার কাজ সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে করতে হলে হ্যান্ডটুলস এর প্রয়োজন । কাজের গুনগতমান ঠিক রেখে সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে হ্যান্ডটুলস এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা যেমন রয়েছে তেমনি এর রক্ষনা-বেক্ষনের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। হ্যান্ডটুলস সঠিকভাবে রক্ষনা-বেক্ষন না করলে এর কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়, ফলে সেই টুলস দিয়ে গুনগত মান বজায় রেখে কাজ করা যায় না। বৈদ্যুতিক লাইন চালু অবস্থায় সংযোগ ও বিচ্ছিন্ন করতে হ্যান্ডটুলস ছাড়া দূর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয় । তাই কারিগরি কর্মকান্ড সুষ্ঠ, সুন্দর ও নিখুঁতভাবে সমাধা করতে সাধারন হ্যান্ডটুলস এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
হ্যান্ডটুলসের তালিকা:- একজন ইলেকট্রিশিয়ানকে যে সকল হ্যান্ডটুলস ব্যবহার করতে হয় তার তালিকা নিম্নে দেওয়া হলো:-
১. নিয়ন টেস্টার
২. ফ্লাট স্ক্রু ড্রাইবার
৩. ফিলিপস স্ক্রু ড্রাইবার
৪. মেজারিং টেপ
৫. এন্ড কাটিং প্লায়ার্স
৬. ওয়্যার স্ট্রিপিং প্লায়ার্স
৭. কম্বিনেশন প্লায়ার্স
৮. ডায়াগোনাল কাটিং প্লায়ার্স
৯. রাউন্ড নোজ প্লায়ার্স
১০. ক্রসপিন হ্যামার
১১. বলপিন হ্যামার
১২. ক্লো হ্যামার
১৩. টেনন স’
১৪. ড্রিল বিট
১৫. ইলেকট্রিক হ্যান্ড ড্রিল মেশিন
১৬. এডজাস্টেবল রেঞ্জ
১৭. পাইপ রেঞ্জ
১৮. ইলেকট্রিক সোল্ডারিং আয়রন
১৯. হ্যাক স
২০. বেঞ্চ ভাইস
বৈদ্যুতিক হ্যান্ডটুলস সমূহের কাজের বর্ণনা:- নিম্নে বৈদ্যুতিক কাজে ব্যবহৃত ১০টি হ্যান্ডটুলস এর বর্ণনা দেওয়া হলো:-
১. নিয়ন টেস্টার:- বিদ্যুতের উপস্থিতি এবং ফেজ তার শনাক্ত করার জন্য এই প্রকারের হ্যান্ডটুলস ব্যবহার করা হয়।
২. মেজারিং টেপ:– কাজ করার সময় কোন বস্তুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা সঠিকভাবে পরিমানের জন্য এই প্রকারের মেজারিং টেপ ব্যবহার করা হয়।
৩. ফ্লাট স্ক্রু ড্রাইবার:- ফ্লাট স্ক্রু ড্রাইবার একটি গুরুত্বপূর্ণ হ্যান্ডটুলস। এর সাহায্যে উডেন স্ক্রু বা মেশিন স্ক্রু খোলা বা লাগানো হয়। এর অগ্রভাগ চেপ্টা বা ফ্লাট বলে একে ফ্লাট স্ক্রু ড্রাইবার বলা হয়।
৪. ফিলিপস স্ক্রু ড্রাইবার:- ফিলিপস স্ক্রু ড্রাইবারও একটি গুরুত্বপূর্ণ হ্যান্ডটুলস। ইহার সাহায্যে যে সকল মেশিনের স্ক্রু এর অগ্রভাগের স্লট (+)ক্রস আকারের এগুলি খোলা বা লাগানো হয়। এর অগ্রভাগ(+)ক্রস আকারের বলে একে ফিলিপস স্ক্রু ড্রাইবার বলা হয়।
৫. কম্বিনেশন প্লায়ার্স:-সাধারনত কারিগরি কাজের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ হ্যান্ডটুলস। এর সাহায্যে কর্তন, মোড়ানো এবং গ্রিপিং করা হয়।
৬. এন্ড কাটিং প্লায়ার্স:– এটি সাধারনত কোন তার এর প্রান্ত কর্তনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
৭. ওয়্যার স্ট্রিপিং প্লায়ার্স:- সাধারনত তার এর উপরের ইনসুলেশন অপসারনের কাজে ওয়্যার স্ট্রিপিং প্লার্য়াস ব্যবহার করা হয়।
৮. ইলেকট্রিক হ্যান্ড ড্রিল মেশিন:- ইহার কাজ সাধারন হ্যান্ড ড্রিলের মত, তবে এটি বিদ্যুত চালিত।
৯. বলপিন হ্যামার:- এটি একটি সাধারন হাতুড়ি এর এক প্রান্ত গোলাকার বলের ন্যায় এবং অপর প্রান্ত ফ্লাট করা থাকে। ধাতব পদার্থ কে নির্দিষ্ট আকারে ভাজ দেওয়া বা বাকানো কিংবা পিটিয়ে বিভিন্ন আকারের করার কাজে এটি ব্যবহার করা হয়।
১০. বেঞ্চ ভাইস:-টেকনিক্যাল কাজে ভাইস একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক টুলস হিসাবে কাজ করে। বেঞ্চ ভাইস এর সাহায্যে কোন জবকে মজবুত ভাবে ধরে কাজ করা হয়।
১১. ইলেকট্রিক সোল্ডারিং আয়রন:- বৈদ্যুতিক জয়েন্ট শক্ত মসৃণ করার কাজে ইলেকট্রিক সোল্ডারিং আয়রন ব্যবহার করা হয়।
১২. রাউন্ড নোজ প্লায়ার্স:- রাউন্ড নোজ প্লায়াস সাধারনত কোন তারকে রিং করা বা গোলাকার করে বাকানোর কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
পাওয়ার টুলস এর ধারণা: যে সকল কাজ হ্যান্ড টুলস দ্বারা করা সম্ভব নয় সে সমস্ত কাজ পাওয়ার টুলস দ্বরা করা সম্ভব। কোন দেওয়ালে ছিদ্র করা বা কাটা কোন অমসৃন জব সমান/মসৃন করা,জয়েন্ট শক্তভাবে জোড়া দেওয়া এবং কাঠ কাটার কাজে পাওয়ার টুলস ব্যবহার করা হয়।
পরিমাপক যন্ত্রের ধারনা:-
যে কোন বস্তু বা রাশির মান পরিমাপ করার জন্য যে সমস্ত টুলস বা যন্ত্র ব্যবহার করা হয় উহাই পরিমাপক টুলস বা পরিমাপক যন্ত্র। দৈঘ্য, প্রস্থ পরিমাপের জন্য বিভিন্ন ধরনের স্কেল ব্যবহৃত হয় ঠিক তেমনি বৈদ্যুতিক রাশি পরিমাপের জন্য বিভিন্ন ধরনের মিটার ব্যবহৃত হয়।
বৈদ্যুতিক রাশি পরিমাপক যন্ত্র:-
নিম্নে বৈদ্যুতিক রাশি পরিমাপের জন্য বিভিন্ন ধরনের মিটার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :-
(১). অ্যামিটার: যে মিটারের সাহায্যে কারেন্ট পরিমাপ করা হয়, তাকে অ্যামিটার বলে। সার্কিট বা বর্তনীর কারেন্ট পরিমাপ করার জন্য অ্যামিটার ব্যবহৃত হয়। এর সাহায্যে অ্যাম্পিয়ার এককে মান পাওয়া যায়।
(২). ভোল্ট-মিটার: যে মিটারের সাহায্যে ভোল্টেজ পরিমাপ করা হয়, তাকে ভোল্ট-মিটার বলে। এর সাহায্যে ভোল্টেজ ভোল্ট এককে পরিমাপ করা হয়।
(৩). ওহম মিটার: যে মিটারের সাহায্যে রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করা হয়, তাকে ওহম-মিটার বলে। এর সাহায্যে রেজিস্ট্যান্স ওহম এককে পরিমাপ করা হয়।
(৪). মাল্টি-মিটার: যে মিটারের সাহায্যে কারেন্ট, ভোল্টেজ ও রেজিস্ট্যান্স ইত্যাদি পরিমাপ করা হয়, তাকে মাল্টি-মিটার বলে। এর সাহায্যে কারেন্ট, ভোল্টেজ ও রেজিস্ট্যান্স ইত্যাদি পরিমাপ করা হয় ।
(৫). ওয়াট মিটার: যে মিটারের সাহায্যে বৈদ্যুতিক পাওয়ার পরিমাপ করা হয় তাকে ওয়াট-মিটার বলে। এর সাহায্যে পাওয়ার ওয়াট এককে পরিমাপ করা হয়।
(৬). ক্লিপ অন মিটার: যে মিটারের সাহায্যে ক্লাম্প করে কারেন্ট পরিমাপ করা হয় তাকে ক্লিপ অন-মিটার বলে। এর সাহায্যে কারেন্ট, ভোল্টেজ ও রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করা যায়।
(৭). এনার্জি মিটার: যে মিটারের সাহায্যে এনার্জি পরিমাপ করা হয়, তাকে এনার্জি মিটার বলে। এর সাহায্যে বিদ্যুতের বিল ইউনিট আকারে পাওয়া যায়।
(৮). পাওয়ার ফ্যাক্টর মিটার: যে মিটারের সাহাযে এসি সার্কিটের পাওয়ার ফ্যাক্টর পরিমাপ করা হয় তাকে পাওয়ার ফ্যাক্টর মিটার বলে। এর সাহায্যে পাওয়ার ফ্যাক্টর পরিমাপ করা হয়।
(৯). লাক্স মিটার: যে মিটারের সাহায্যে আলোর তীব্রতা পরিমাপ করা যায়, তাকে লাক্স মিটার বলে। এর সাহায্যে আলোর প্রখরতা পরিমাপ করা হয় ।
(১০). ফ্রিকুয়েন্সি মিটার: যে মিটারের সাহায্যে এসি সার্কিটের ফ্রিকুয়েন্সি পরিমাপ করা হয় তাকে ফ্রিকুয়েন্সি বা হার্জ মিটার বলে। ফ্রিকুয়েন্সি মিটারের সাহায্যে এসি সরবরাহের ফ্রিকুয়েন্সি পরিমাপ করা হয়।
(১১). ট্যাকো মিটার: যে মিটারের সাহায্যে মোটরের ঘূর্ণন গতিবেগ পরিমাপ করা হয়, তাকে ট্যাকো মিটার বলে। ট্যাকো মিটারের সাহায্যে মোটরের ঘূর্ণন আরপিএম এ মাপা হয়।
(১২). মেগার: যে মিটারের সাহায্যে তারের ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করা হয়, তাকে মেগার বলে। এর সাহায্যে ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স মেগা ওহমে পরিমাপ করা হয়।
(১৩). আর্থ টেস্টার: যে মিটারের সাহায্যে আর্থ রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করা হয়, তাকে আর্থ টেস্টার বলে। এর সাহায্যে আর্থ রেজিস্ট্যান্স ওহমে পরিমাপ করা হয় ।
গুরুত্বপূর্ণ সাজেশান
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. দৈহিক শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে কারিগরি ক্ষেত্রে যে সমস্ত টুলস ব্যবহার করা হয়, সেগুলিকে কি বলে?
২. ইঞ্জিনিয়ার বা দক্ষ টেকনিশিয়ান এর কাজ সঠিক ও সুষ্ঠভাবে করতে হলে কিসের প্রয়োজন?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. হ্যান্ড টুলস কি?
২. সর্বাধিক ব্যবহৃত ৫টি হ্যান্ড টুলস এর নাম লেখ?
৩. কম্বিনেশন প্লায়ার্স দিয়ে কী কী করা যায়?
৪. বেঞ্চ ভাইস এর কাজ কি?
রচনা মূলক
১. সাধারন হ্যান্ড টুলস এর প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা কর?
২. ৫টি পরিমাপ যন্ত্রের নাম লেখ এবং এদের কাজ বর্ণনা কর?