ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্সের ধারণা: ইঞ্জিনিয়ারিং বা প্রযুক্তির যে শাখায় পরিবাহীর ভিতর দিয়ে ইলেকট্রনের প্রবাহ সম্পর্কীয় বিষয়সমূহ নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে ইলেকট্রিক্যাল বলে। অপরদিকে প্রযুক্তির যে শাখায় ভ্যাকুয়াম বা সেমিকন্ডাকটর ডিভাইসের ভিতর দিয়ে ইলেকট্রনের প্রবাহ সম্পর্কে আলোচনা করা হয় তাকে ইলেকট্রনিক্স বলে। উভয়ের মধ্যে পার্থক্য হলো ইলেকট্রিক্যাল এর ক্ষেত্রে ইলেকট্রন পরিবাহীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় আর ইলেকট্রনিক্স এর ক্ষেত্রে ইলেকট্রন ভ্যাকুয়াম বা সেমিকন্ডাকটরের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
ইলেকট্রিসিটির ধারণা: ইলেকট্রিসিটি বা বিদ্যুৎ এমন এক প্রকার অদৃশ্য শক্তি, যাকে এক শক্তি থেকে অন্য শক্তিতে রুপান্তর করা যায়। ইহার সাহায্যে আলো, তাপ, শব্দ, গতি ইত্যাদি উৎপন্ন করে বাস্তব অনেক কার্যাদি সম্পন্ন করা হয়ে থাকে।
ইলেকট্রিসিটির ব্যবহার: আমরা বিদ্যুৎ ব্যবহার করে বাতি ও ফ্যান চালাই, টেলিভিশন দেখি, মোবাইল চার্জ করি, বাড়ি ছাদে ট্যাংকিতে পানি তোলার বা ক্ষেতে সেচ দেওয়ার জন্য মোটর চালাই, ল্যাপটপ বা কম্পিউটার চালাই ক্যামেরা বা মাইক্রোফোন ও স্পীকার সচল করার জন্য বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়।
ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি সমূহের তালিকা:
ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি: | ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি |
১. বৈদ্যুতিক বাতি ২. বৈদ্যুতিক পাখা বা ফ্যান ৩. বৈদ্যুতিক মোটর ৪. ইলেকট্রিক ওভেন ৫. জেনারেটর ৬. আইপিএস/ ইউপিএস ৭. ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার ৮. ফ্রিজ ৯. ট্রান্সফর্মার ১০. সুইচ গিয়ার ১১. ম্যাগনেটিক কন্টাক্টর ১২. সার্কিট ব্রেকার | ১. টেলিভিশন ২. মোবাইল ফোন ৩. ডেস্কটপ কম্পিউটার ৪. ক্যামেরা ৫. ফটোকপিয়ার ৬. স্ক্যানার ৭. প্রিন্টার ৮. ল্যাপটপ ৯. মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ১০. টেলিফোন ১১. রাডার ১২. অ্যামপ্লিফায়ার |
কারেন্ট , ভোল্টেজ ও রেজিস্ট্যান্স এর সংজ্ঞা:
ভোল্টেজ: পরিবাহীর মধ্যেকার মুক্ত ইলেকট্রনসমূহকে একটি নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত করানোর জন্য যে চাপ বা বল প্রয়োগ করা হয় তাকে ভোল্টেজ বলে। ভোল্টেজ এর একক হচ্ছে ভোল্ট। যে যন্ত্রের সাহায্যে এই ভোল্টেজ পরিমাপ করা হয় তাকে বলে ভোল্টমিটার।
কারেন্ট: কোন পরিবাহীর মধ্য দিয়ে ইলেকট্রন বা চার্জ প্রবাহের হারকে কারেন্ট বলে। কারেন্ট পরিমাপের একক হচ্ছে অ্যাম্পিয়ার। যে যন্ত্রের সাহায্যে এই কারেন্ট পরিমাপ করা হয় তাকে বলে এ্যামিটার।
রেজিস্ট্যান্স: পরিবাহীর যে বৈশিষ্ট বা ধর্মের কারনে এর মধ্যদিয়ে কারেন্ট প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয় তাকে রেজিস্ট্যান্স বা রোধ বলে। রেজিস্ট্যান্স এর একক হচ্ছে ওহম।যে যন্ত্রের সাহায্যে এই রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করা হয় তাকে বলে ওহমমিটার।
অল্টারনেটিং কারেন্ট বা এসি:- সময় বৃদ্বির সাথে সাথে যে কারেন্ট এর মান ও দিক সর্বদা পরিবর্তন হতে থাকে তাকে অল্টারনেটিং কারেন্ট বা এসি বলে।
ডিসি বা ডাইরেক্ট কারেন্ট: সময় বৃদ্বির সাথে সাথে যে কারেন্ট এর মান ও দিক স্থির থাকে তাকে ডাইরেক্ট কারেন্ট বা ডিসি বলে।
এসি এবং ডিসির মধ্যে মৌলিক পার্থক্য:- এসি এবং ডিসির মধ্যে মূল পার্থক্য হলো- এসি কারেন্ট পরিবর্তনশীল আর ডিসি কারেন্ট অপরিবর্তিত বা স্থির থাকে।
ব্যক্তিগত নিরাপত্তা পোশাক (পিপিই) এর প্রকারভেদ:
১. স্কিন প্রোটেক্টর: অ্যাপ্রোন, ইহা শরীর ও কাপড়ে ময়লা লাগা এবং ব্যক্তিকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করার জন্য পরিধান করা হয়।
২. হ্যান্ড অ্যান্ড আর্ম প্রোটেক্টর: গ্লোভস, ইহা শরীরের চার্জ থেকে যন্ত্রপাতিকে এবং যন্ত্রপাতির ধারাল অংশ থেকে হাতকে রক্ষা করে।
৩. হেড প্রোটেক্টর: হেলমেট, ইহা মাথাকে রক্ষা করে।
৪. ফুট প্রোটেক্টর: সেফটি বুটস, ইহা বৈদ্যুতিক শক থেকে রক্ষা করে, বৈদ্যুতিক খুটিতে আরহন করার কাজে ব্যবহার হয়।
৫. চক্ষু সুরক্ষাকারী বা সেফটি গগলস: হাত দিয়ে কাজ করার সময় কোন বস্তু ছিটকে যাতে চোখে এসে পড়তে না পারে সেই জন্য চক্ষু সুরক্ষাকারী হিসাবে সেফটি গগলস ব্যবহার করা হয়।
ব্যক্তিগত নিরাপত্তা পোশাক (পিপিই) এর প্রয়োজনীয়তা: বাস্তব জীবনে দেখা যায় হাসপাতাল, বিজ্ঞান পরীক্ষাগার/ল্যাবরেটরি, বৈদ্যুতিক লাইন প্রভৃতি স্থানে যারা কাজ করছে তারা পুরো শরীরের অধিকাংশ স্থান ঢেকে রেখে একটি পোশাক ব্যবহার করছে,এটাই পিপিই। কার্যক্ষেত্রে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পিপিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পিপিই ছাড়া কার্যক্ষেত্রে অনেক সময় দূঘটনার সম্মুখীন হতে হয়। এমনকি মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই অন্যান্য কার্যক্ষেত্রের ন্যায় ইলেকট্রিক্যাল কর্মক্ষেত্রেও পিপিই ব্যবহার করা জরুরি।
ইলেকট্রিক্যাল অ্যাক্সেসরিজ: আইসিটি এবং আইওটি কর্মক্ষেত্রে আমাদের আবশ্যকীয় কিছু ইলেকট্রিক্যাল অ্যাক্সেসরিজ বা পার্টস ব্যবহার করতে হয়। যেমন-সুইচ: ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার লাইনের পাওয়ার চালু বা বন্ধ করার জন্য এই সুইচ ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও আরো রয়েছে- সকেট, মাল্টিপ্লাগ. পাওয়ার ক্যাবল, সার্কিট ব্রেকার, ফিউজ, কাটআউট, রিলে ইত্যাদি অত্যাবশ্যকীয় ইলেকট্রিক্যাল অ্যাক্সেসরিজ।
ইলেকট্রিক্যাল কম্পোনেন্টস:
ক্যাপাসিটর: দুইটি সুপরিবাহী পদার্থ অর্থাৎ কনডাক্টর এর মাঝে যদি কোন ইনসুলেটর দিয়ে একটিকে অপরটি হতে আলাদা করে রাখা হয় তখন এর ভিতর দিয়ে এসি প্রবাহিত হওয়ার কারনে ইহার চার্জ ধারন ক্ষমতা বেড়ে যায়। এই ধরনের চার্জ ধারককে ক্যাপাসিটর বলে। ক্যাপাসিটরের বৈশিষ্ট হচ্ছে এর ভিতর দিয়ে প্রবাহিত কারেন্ট এর ফ্রিকুয়েন্সি যত বেশী হবে বিদ্যুৎ প্রবাহে বাধা তত কম হবে।
ইন্ডাক্টর: ইহা এক ধরনের প্যাসিভ দুই টার্মিনাল বিশিষ্ট বৈদ্যুতিক কম্পোনেন্টস বা পার্টস। তারের কুন্ডলীর মধ্য দিয়ে এসি কারেন্ট প্রবাহিত করলে রোধের সৃষ্টি হয়। ইন্ডাক্টরের বৈশিষ্ট হলো- ইহার এর ভিতর দিয়ে প্রবাহিত কারেন্টের ফ্রিকুয়েন্সির পরিমান বাড়ালে রেজিস্ট্যান্স এর মান বেড়ে যায়,অপরদিকে ফ্রিকুয়েন্সির মান কমলে রেজিস্ট্যান্স এর মান কমে যায়।
আইসিটি কর্মক্ষেত্রে ব্যবহৃত সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইসসমূহ:
আইসিটি কর্মক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইসসমূহ হচ্ছে- বিভিন্ন প্রকার রেকটিফায়ার ডায়োড, জিনার ডায়োড, এলইডি,ট্রানজিস্টও, রেগুলেটর, অপারেশনাল অ্যামপ্লিফায়ার ও আইসিসহ নানা প্রকার কম্পোনেন্টস।
ডায়োড: ডায়োড দুই টারমিনাল বিশিষ্ট পি-এন জাংশন ডিভাইস। পাওয়ার সাপ্লাই সার্কিটে এসি ভোল্টেজকে পালসেটিং ডিসি ভোল্টেজএ রুপান্তর করার জন্য ডায়োড ব্যবহৃত হয়।
জিনার ডায়োড: এই প্রকার ডায়োড ভোল্টেজ স্টাবিলাইজেশনের বা রেগুলেশনের কাজে ব্যবহৃত হয়।
এলইডি: ইহার পুর্ণনাম হচেছ লাইট ইমিটিং ডায়োড। এই ডায়োডের ভিতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে আলো উৎপন্ন হয়।
ট্রানজিস্টর: টান্সজিস্টর সাধারনত উচ্চ গতির সুইচিং এবং ভোল্টেজ অ্যামপ্লিফিকেশনের এর কাজ করে থাকে। ইহা একটি তিন টারমিনাল বিশিষ্ট ডিভাইস । টারমিনাল বা প্রান্তগুলো হলো-যথাক্রমে বেস, ইমিটার ও কালেকটর। টান্সজিস্টর এর ভিতর দিয়ে কারেন্ট প্রবাহের উপর ভিত্তি করে ইহাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয় যথা:
১. এন পি এন
২. পি এন পি
ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (আইসি): ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (আইসি) হলো মুলত: অনেক গুলো সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইসের সমন্বয়ে গঠিত একটি ডিভাইস। বর্তমান ইলেকট্রনিক্স সিস্টেমে অনেকগুলো আইসি এবং মাইক্রোপ্রসেসর একত্র করে একটি সম্বনিত বোর্ডে শত শত সার্কিটের কাজ সম্পন্ন করা যায়।
মেজারিং ইন্সট্রুমেন্ট: কর্মক্ষেত্রে আমাদের কাজ করার সময় ভোল্টেজ, কারেন্ট ও রেজিস্টেন্স পরিমাপ করতে হয় এবং সার্কিট এর সংযোগ বা পার্টস ,কম্পোনেন্টস ও ডিভাইসসমূহের কন্টিনিউটি টেস্ট করার দরকার হয়। যে যন্ত্রসমূহ ব্যবহার করে এই কাজ গুলো করা হয় তাদের ইলেকট্রিক্যাল মেজারিং ইন্সটুমেন্ট বলা হয়। ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স সিস্টেমে এই মেজারিং ইন্সটুমেন্টগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম।
এভোমিটার বা মাল্টিমিটারের কাজ:- মাল্টিমিটারের কাজ হচ্ছে কারেন্ট, ভোল্টেজ, রেজিস্ট্যান্স, ফ্রিকুয়েন্সি এবং কন্টিনিউটি পরিমাপ করা।
মাল্টিমিটারগুলো সাধারনত দুই প্রকারের হয়ে থাকে যথা:-
১. এনালগ মাল্টিমিটার
২. ডিজিটাল মাল্টিমিটার
নিম্নে এনালগ ও ডিজিটাল মাল্টিমিটার এর মধ্যে পার্থক্য সমূহ দেখানো হলো:
এনালগ মাল্টিমিটার | ডিজিটাল মাল্টিমিটার |
১. এনালগ মাল্টিমিটার একটি গ্যালভানোমিটারের সাথে চলমান নির্দেশক ব্যবহার করে পাঠ প্রর্দশন করে। | ১. ডিজিটাল মাল্টিমিটারগুলো ডিজিটাল সংখ্যায় পাঠ প্রদর্শন করে। |
২. এনালগ মাল্টিমিটারে পরিমাপকৃত রাশির মান নির্ণয় পদ্বতি একটু জটিল | ২.মান নির্ণয় পদ্বতি খুবই সহজ |
৩. এনালগ মাল্টিমিটারে ইরর এর পরিমান বেশী | ৩. ইরর এর পরিমান কম |
৪. ডাটা কম নির্ভুল | ৪. ডাটা নির্ভুল |
৫. ফাংশন কম | ৫. ফাংশন বেশী থাকে |
৬. দামে সস্তা | ৬. দামে বেশী |
৭. ব্যবহার কম | ৭. ব্যবহার বেশী |
ইএসডি ডিভাইসের ধারণা: যখন বৈদ্যুতিক চার্জযুক্ত ডিভাইস মানব দেহের সংস্পর্শে আসে, তখন মানুষের দেহ বা অংগ থেকে স্থির বিদ্যুৎ বা চার্জ উক্ত ডিভাইসে প্রবেশ করতে পারে। ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস বিশেষ করে আইসি ও মাইক্রোপ্রসেসর এ এই চার্জ প্রবেশ করলে তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এই সকল সার্কিট নিয়ে কাজ করার সময় যাতে মানুষের দেহ থেকে উৎপন্ন এই চার্জ ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসগুলোকে প্রভাবিত বা নষ্ট করতে না পারে সেই জন্য যে প্রটেক্টিং ডিভাইসটি ব্যবহার করা হয় তাকে ইলেক্টোস্টাটিক ডিসচার্জ বা ইএসডি ডিভাইস বলে।
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. ইলেকট্রিসিটি কী?
২. সুইচ কি কাজে ব্যবহৃত হয়?
৩. এসি ও ডিসি এর মৌলিক পার্থক্য কী?
৪. ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স এর মধ্যে পার্থক্য কী?
৫. ইন্ডাক্টরের বৈশিষ্ট কী?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. ট্রানজিস্টর এর কাজ কী? ট্রানজিস্টর কত প্রকার ও কী কী?
২. ইলেকট্রিক্যাল কর্মক্ষেত্রে পিপিই জরুরী কেন?
৩. ইএসডি কী? কেন প্রয়োজন?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. ইলেকট্রিক্যাল কর্মক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় এমন পাঁচটি পিপিইর নাম ও কাজ লেখ।
২. মল্টিমিটারের কাজ কি? এনালগ ও ডিজিটাল মাল্টিমিটার এর পার্থক্য লেখ।
৩. ডায়োড এর প্রকারভেদ করে প্রত্যেক প্রকারের কাজ বর্ণনা কর?