আল্লাহর রাস্তার আমলসমূহ বলতে আমরা সেই সব আমল সমূহকে বুঝি, যেগুলো ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পালন করতে হয়। আল্লাহর রাস্তার আমলসমূহ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, তবে এগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সাথে সম্পর্ক মজবুত করা এবং তার নির্দেশনা অনুসরণ করা। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আল্লাহর রাস্তার আমলসমূহ উল্লেখ করা হলো:
আল্লাহর রাস্তায় হিজরত ও নছরতে ফযীলত সমূহ:
হযরত মুয়াবিয়া (রা) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সঃ) থেকে শুনেছি তিনি এরশাদ করেন-
“হিজরত বন্ধ হবে না; অর্থাৎ হিজরতের বিধান ততদিন অব্যাহত থাকবে, যতদিন তওবার দরজা বন্ধ না হয় l আর তওবার দরজা ততদিন বন্ধ হবে না যতদিন সূর্য তার অস্ত স্থল অর্থ্যৎ পশ্চিম আকাশে উদয় না হয় I”আবু দাউদ (অর্থাৎ কিয়ামত এর আগ পর্যন্ত হিজরত চলবে)
হিজরতের প্রকারভেদ: হিজরত দুই প্রকার যথা: ১. স্থায়ী হিজরত ২. অস্থায়ী হিজরত
স্থায়ীভাবে হিজরত করেছেন স্বয়ং হুজুর (সঃ) এবং অনেক সাহাবায়ে কেরাম (রা) তা হলো মক্কা থেকে মদীনাতে, অপরদিকে অস্থায়ীভাবে হিজরত হুজুর(সঃ) মদীনার জিন্দিগীতে ২৫/২৭ বার করেছেন তার মধ্যে নবীজীর একটি অস্থায়ী হিজরত ছিল ৭মাস ব্যাপী
হিজরতের দ্বারা মুহাজিরের গুনাহ মাফ হয়ে যায়:
” নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে এবং হিজরত করেছে ও আল্লাহর পথে জানমাল দিয়ে মেহনত করেছে, এরাই আল্লাহর রহমত আশা করে, আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”(আল-বাকারা- ২১৮)
হুজুর (সঃ) বলেন: “ইসলাম ঐ সমস্ত গুনাহ সমূহ নিশ্চিহ্ন করে দেয়, যাহা ইসলামের পূর্বে করা হয়েছে এবং হিজরত ঐ সমস্ত গুনাহ সমূহ নিশ্চিহ্ন করে দেয় যাহা হিজরতের পূর্বে করা হয়েছে” (মিশকাত)
আল্লাহ তায়ালা হিজরতকারী বা মুহাজির এবং নছরতকারী বা আনসারদের ক্ষমা ঘোষনা দিয়ে বলেন:
“যারা ঈমান এনেছে ও হিজরত করেছে এবং নিজেদের জান-মাল দিয়ে মহান আল্লাহর রাস্তায় মেহনত করেছে এবং যারা হিজরতকারীদেরকে থাকার জায়গা দিয়েছে ও সাহায্য করেছে , এরা সবাই হচ্ছে প্রকৃত ঈমানদার, তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সম্মানজনক রিযিক” (আল-আনফাল- ৭৪)
আল্লাহ তায়ালা হিজরতকারী বা মুহাজির এবং নছরতকারী বা আনসারদের সাথে জান্নাতের ওয়াদা করেছেন:
“মুহাজির ও আনসারদের মাঝে যারা প্রথম দিকে ঈমান এনেছে এবং পরবর্তী সময়ে যারা একান্ত নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসরন করেছে, আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং আল্লাহ পাক তাদের জন্য এমন এক সুরম্য জান্নাত তৈরি করে রেখেছেন যার তলদেশ দিয়ে ঝরণাসমূহ প্রবাহিত হয়, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, আর এটাই সর্বোত্তম সাফল্য বা মহা সফলতা।” (তওবাহ -১০০)
স্বয়ং হুজুর (সঃ) মুহাজির বা হিজরতকারী এবং আনসার বা নছরতকারী দের জন্য দোয়া করেছেন-
” হে আল্লাহ আনসারদেরকে আপনি মাফ করে দেন, আনসারদের সন্তানদেরকে মাফ করে দেন এবং আনসারদের সন্তানদের সন্তানদেরকেও এবং আনসারদের নারীদেরকেও মাফ করে দেন” সহীহঃ মুসলিম (৭/১৭৩-১৭৪) ।
হেদায়াতের বয়ান:
“যারা ঈমান আনয়ন করেছে, হিজরত করেছে এবং আল্লাহ পাকের রাস্তায় জান-মাল দিয়ে মেহনত করেছে আল্লাহ তায়ালার নিকট তাদের জন্য সবচেয়ে বড় সম্মান রয়েছে এবং এরাই কামিয়াব” (তওবাহ- 20)
হযরত তালহা (রা ) একবার বলেন, যে আমার যে ফযীলত তা তোমাদের নেই. বাইতুল্লাহ শরীফের চাবি আমার দখলে, ইচ্ছা করলে বাইতুল্লাহ শরীফের অভ্যন্তরে ও রাত্রি যাপন করতে পারি I হযরত আব্বাস (রা ) বলেন হাজীদের পানি সরবরাহের ব্যবস্থাপনা আমার হাতে, মসজিদুল হারামের শাসন ক্ষমতা আমার নিয়ন্ত্রনে।হযরত আলী (রা) অতঃপর বললেন, বুঝতে পারিনা এগুলোর উপরে তোমাদের এত গর্ব কেন? আমার কৃতিত্ব হলো আমি সবার থেকে ছয় মাস আগে বাইতুল্লার দিকে ফিরে নামাজ আদায় করছি এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর সাথে যুদ্ধে ও অংশ নিয়েছি। তাদের এই আলোচনার ভিত্তিতে নিম্নের আয়াত নাযিল হয়:-
“তোমরা কি (হজ্জের মৌসুমে) হাজীদের পানি পান করানো ও কাবা ঘরের খেদমত করাকে সে ব্যত্তির কাজের সমান মনে করো, যে ব্যক্তি আল্লাহ পাকের উপর ঈমান এনেছে, আখেরাতের উপর ঈমান এনেছে এবং মেহনত করেছে আল্লাহর রাস্তায়; এরা কখনো আল্লাহর নিকট সমান মর্যাদার নয়; আল্লাহ পাক কখনো অত্যাচারী জালিমদের সঠিক পথ দেখান না” (তওবা- ১৯)
“তোমাদের মধ্যে হতে একটি জামাত এমন হওয়া জরুরী যারা মানুষদের কল্যানের দিকে ডাকবে, সৎ কাজের আদেশ দিবে, অসৎ কাজ থেকে তাদের বিরত রাখবে, সত্যিকার অর্থে এরাই হচ্ছে সফলকাম জামাত ।” আল-ইমরান- ১০৪
“ঐ ব্যক্তির কথার চেয়ে ভাল কথা আর কাহার হইতে পারে, যে মানুষদের আল্লাহ পাকের দিকে ডাকে এবং সে নিজেও নেক আমল করে এবং বলে যে, নিশ্চয় আমি মুসলমানদের মধ্য হইতে একজন ।” হা-মীম আস-সাজদাহ ৩৩
আল্লাহর রাস্তায় ৪টি কাজ বেশী বেশী করব-
দাওয়াত
আল্লাহ তায়ালা রাসূল (সঃ) কে সম্বোধন করিয়া এরশাদ করেন- আপনি আপনার রবের পথের দিকে দাওয়াত দিন জ্ঞানগর্ভ কথা ও উত্তম উপদেশের দ্বারা” (নাহল-১২৫)
“তোমরা তার সাথে নম্রভাবে কথা বলবে, হতে পারে সে তোমাদের উপদেশ কবুল করবে অথবা সে আমায় ভয় করবে। তারা বলল হে আমাদের প্রভু ! আমরা ভয় করছি সে আমাদের সাথে বাড়াবাড়ি করবে, আল্লাহ তায়ালা বললেন, তোমরা কোন রকম ভয় করো না, আমি তো তোমাদের সঙ্গে আছি, আমি সব কিছু শুনি, সব কিছু দেখি।” (ত্বাহা 88-৪৬)
তালীম
“আপনি আমার সেসব বান্দাকে সুসংবাদ শুনিয়ে দেন, যারা উত্তম কথা গুলোর উপর আমল করে। এরাই ঐসব বান্দা যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা হেদায়াত দিয়েছেন এবং তারাই জ্ঞানী লোক । ” যুমার- ১৭-১৮
হযরত আবু হুরায়রা (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (স:) কে এই এরশাদ করতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আমার এই মসজিদে (অর্থাৎ কেবল মসজিদে নয় বাড়িতেও) কোন কল্যানের কথা শিক্ষা করা অথবা শিক্ষা দেওয়ার জন্য আসবে সে ( সওয়াব হিসাবে) আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় জিহাদকারীর সমতুল্য হবে I ইবনে মাজাহ
রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে সম্বোধন করিয়া আল্লাহ তায়ালা বলিতেছেন- আপনি এই দোয়া করুন যে, হে আমার রব আমার এলেম বৃদ্ধি করিয়া দিন (ত্বহা- ১১৪)
রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে সম্বোধন করিয়া আল্লাহ তায়ালা বলিতেছেন-যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে? বিবেকবান লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে।[সূরা যুমার : ০৯]
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এরশাদ করিয়াছেন, যখন আল্লাহ তায়ালা কোন বান্দার সহিত কল্যানের এরাদা করেন তখন তাহাকে দ্বীনের বুঝ দান করেন এবং সঠিক কথা তাহার অন্তরে ঢালেন । (তাবারানী)
এবাদাত
তারুফী বা পরিচিতি বয়ান:
গাস্থের আদব :
ঈমান এক্কীনের কথা:
মাগরীব বাদ বয়ান:
যোহরবাদ এবং এশারবাদ তালিম:
মোজাকারা:
ওয়াফেছী বয়ান:
ইনফেরাদী বা ব্যক্তিগত আমলসমূহ: