বর্তমান বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার সাথে সাথে মানব জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিদ্যুতের ব্যবহার অপরিহার্য পড়ছে । তাই প্রতিটি মানুষকে বিদ্যুতের ব্যবহার সম্পর্কে জানা দরকার। অন্যমনস্ক, অতিরিক্ত সাহসিকতা, অজ্ঞতা, যন্ত্রপাতির অপব্যবহার, অসতর্কতা ইত্যাদি কারনে ঘর বাড়ি ও শিল্প কারখানাতে নানা রকমের দূর্ঘটনা ঘটে থাকে। সুতরাং বিদ্যুৎ সম্পর্কে জানতে হবে এবং এর ব্যবহার কৌশল জেনে যথাযথ নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
নিরাপত্তা ও নিরাপদ কর্মপদ্ধতি:
ইংরেজিতে বলে যে সেফটি ফার্স্ট অর্থাৎ কাজের প্রথমে নিরাপত্তা । কাজের শুরুতে নিরাপত্তা, কাজ চলাকালীন সময়ে নিরাপত্তা এবং কাজের শেষে নিরাপত্তা এই বিষয়গুলো চিন্তা করে কাজ করতে হবে। নিরাপত্তার শর্তাবলি যথাযথভাবে পালন করে বৈদ্যুতিক কাজ করাকে নিরাপদ কর্ম পদ্ধতি বলে ।
বৈদ্যুতিক দূঘর্টনা সংঘটনের উল্লেখযোগ্য কারনসমূহ:
ক. বৈদ্যুতিক লাইনে সংঘটিত কারনসমূহ: – ১.ওভার লোড ২.শর্ট সার্কিট ৩. আর্থ ফল্ট ৪. ওভার ভোল্টেজ ৫.আন্ডার ভোল্টেজ ৬. স্পার্কি ৭. লুস কানেকশন ৮. লাইটেনিং এন্ড সার্জ ইত্যাদি।
খ.ব্যক্তিগত/মানবীয় কারনসমূহ:
১. বৈদ্যুতিক আইন অমান্য করিলে
২. কাজে অমনোযোগী থাকলে
৩. দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকিলে
৪. ভয়ভীতি ও নার্ভাস অনুভব করার কারনে
৫. অবসাদ বা ক্লান্ত অব¯হায় থাকিলে
৬. কাজে তাড়াহুড়া করিলে
৭. অজ্ঞতা ও বুদ্ধিহীনতার কারনে
৮.অতিরিক্ত সাহসিকতা দেখাতে গিয়ে
৯. নিউট্রালে সুইচ লাগালে
১০. বৈদ্যুতিক লাইনে কেউ কাজ করছে কিনা, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়ে বিদ্যুত সরবরাহ দিলে
১১. লাইনে বিদ্যুৎ আছে কিনা সেই ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়ে বৈদ্যুতিক লাইন স্পর্শ করলে
১২. বৈদ্যুতিক লাইনে কাজ করার সময় হেলমেট, এপ্রোন, সেফটি বেল্ট, গগলস ইত্যাদি পরিধান করে কাজ না করলে।
গ. যান্ত্রিক ত্রুটির কারনসমূহ:
১. ত্রুটিপূর্ন যন্ত্রপাতি ও মালামাল ব্যবহার করার কারন
২. রক্ষন ও নিয়ন্ত্রন কারী যন্ত্রপাতি ত্রুটিপূন হওয়ার কারনে
৩. বৈদ্যুতিক মেশিন, যন্ত্রপাতি কিংবা চলমান যন্ত্রপাতি গুলো যথাযথভাবে আর্থিং করা না থাকলে
৪. পরিবাহী তারের ইনসুলেশন খারাপ হলে
৫. ঘূর্ণায়মান মেশিনে কভার না থাকলে।
বৈদ্যুতিক দূঘর্টনার প্রতিকারসমূহ:
. বৈদ্যুতিক আইন অমান্য করা যাবে না
২. বৈদ্যুতিক লাইনে কাজ করার সময় মনোযোগী থাকতে হবে
৩. দুশ্চিন্তা নিয়ে বৈদ্যুতিক লাইনে কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে
৪. ভয়ভীতি ও নার্ভাসনেস নিয়ে বৈদ্যুতিক লাইনে কাজ করা যাবে না
৫. অবসাদ বা ক্লান্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক কাজ করা থেকে দূরে থাকতে হবে
৬. কাজে তাড়াহুড়া করা যাবে না
৭. অজ্ঞতা ও বুদ্ধিহীনতা পরিহার করতে হবে
৮.অতিরিক্ত সাহসিকতা দেখানো যাবে না
৯. নিউট্রালে সুইচ ন লাগিয়ে ফেজ তারে লাগাতে হবে
১০. বৈদ্যুতিক লাইনে কেউ কাজ করছে কিনা, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে বিদ্যুত সরবরাহ দিতে হবে
১১. লাইনে বিদ্যুৎ আছে কিনা সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে বৈদ্যুতিক লাইন সতর্কতার সাথে স্পর্শ করতে হবে
১২. বৈদ্যুতিক লাইনে কাজ করার সময় হেলমেট, এপ্রোন, সেফটি বেল্ট, গগলস ইত্যাদি পরিধান করতে হবে।
১৩. ত্রুটিপূর্ন যন্ত্রপাতি ও মালামাল পরিহার করতে হবে
১৪. সঠিক মানের রক্ষন ও নিয়ন্ত্রনকারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হবে
১৫. বৈদ্যুতিক মেশিন, যন্ত্রপাতি কিংবা চলমান যন্ত্রপাতিগুলো যথাযথভাবে আর্থিং করে নিতে হবে
১৬. সঠিক ইনসুলেশন যুক্ত তার ব্যবহার করতে হবে।
বৈদ্যুতিক দূঘর্টনার ফলাফল বা ক্ষতিসমূহ:
১. হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে
২. শরীরে কারেন্ট প্রবাহের ফলে মাংসপেশী, নার্ভ ও টিস্যু ধ্বংস হতে পারে
৩. বৈদ্যুতিক উৎসের সাথে লাগার কারনে শরীরের ঐ অংশ তাপের কারনে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে
৪. বৈদ্যুতিক শর্কের কারনে পড়ে গিয়ে আঘাত প্রাপ্ত হতে পারে
৫. আর্কের কারনে আল্টা-ভায়োলেট রশ্নিতে চোখের দৃষ্টি হারাতে পারে
৬. আর্কের কারনে শ্রবণ শক্তি হারাতে পারে।
বৈদ্যুতিক দূঘর্টনায় আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে করনীয় সমূহ:
ক.দূর্ঘটনায় কবলিত ব্যক্তিকে উদ্ধার:
১. বিদ্যুৎ আহিত ব্যক্তিকে প্রথমে স্পর্শ করা যাবে না
২. বিদ্যুৎ লাইনে সংযুক্ত অবস্থায় থাকলে বিদ্যুৎ প্রবাহ বা মেইন সুইচ বন্ধ করে বিদ্যুৎ আহিত ব্যক্তিকে লাইন থেকে মুক্ত করতে হবে।
৩. মুক্তকরনের কাজে শুষ্ক ইনসুলেটেড পদার্থ যেমন-কাঠের টুকরা, রশি, শুকনা কাপড় রাবার গ্লোভস ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪. কোন অবস্থাতে চালু লাইন হতে বিদ্যুৎ আহিত ব্যক্তিকে ধাতব পদার্থ বা ভেজা কোন কিছু দিয়ে ধরা যাবে না।
৫. যদি অবস্থা এমন হয় যে, বিদ্যুৎ লাইন এর প্রবাহ বন্ধ করা যাচেছ না তাহলে শুকনা বা ইনসুলেটেড পদার্থ যেমন- কাঠ, রাবার বা প্লাস্টিকের উপর দাড়িয়ে আহিত ব্যক্তিকে ধাক্কা দিয়ে লাইন থেকে মুক্ত করে নিতে হবে।
খ.দূর্ঘটনায় কবলিত ব্যক্তিকে প্রাথমিক চিকিৎসা:
১. বিদ্যুৎ আহিত ব্যক্তিকে বিদ্যুৎ লাইন হতে সরিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হবে
২. বিদ্যুৎ আহিত ব্যক্তির পালস ও শ্বাসক্রিয়া চলছে কিনা নিশ্চিত হতে হবে
৩. শ্বাসক্রিয়া না চললে কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় শ্বাসক্রিয়া চালু করার ব্যাবস্থা করতে হবে
৪. হৃদপিন্ডের স্পন্দন পাওয়া না গেলে বুকের উপর হালকা চাপ দিতে হবে
৫. কোন অবস্থাতে আক্রান্ত ব্যক্তিকে একা রেখে কোথাও যাওয়া যাবে না, বরং আক্রান্ত ব্যক্তিকে শুকনা ও আরামদায়ক স্থানে রাখতে হবে। তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করতে হবে।
গ.দূর্ঘটনায় কবলিত ব্যক্তিকে ডাক্তরী চিকিৎসা:
বিদ্যুৎ আহিত ব্যক্তিকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে প্রয়োজনে দ্রুতডাক্তারের কাছে নেওয়ার ব্যাবস্থা করতে হবে এবং ডাক্তারী পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে
ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জামসমূহ:
কর্মস্থলে কার্যাবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সম্ভাব্য ক্ষতি বা দূর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নিম্নলেখিত নিরাপত্তা সরঞ্জামগুলি ব্যবহারের গুরুত্ব অপরিসীম:-
১. চক্ষু সুরক্ষাকারী বা সেফটি গগলস
২. কানের প্লাগ
৩. মাস্ক
৪. হ্যান্ড গ্লোভস বা হাত মোজা
৫. সেফটি স্যু
৬. অ্যাপ্রোন
৭. হেলমেট
৮. সেফটি বেল্ট