ফরয নামাযের পরের আমলসমূহ:
“৪০ হাদীস” বা “আল-আরবাইন নাভাভী” হাদীসের একটি বিখ্যাত সংকলন, যা ইসলামের প্রখ্যাত স্কলার ইমাম নবী (রহঃ) দ্বারা সংকলিত। এটি মোট ৪০টি হাদীসের সমষ্টি, যা মুসলিম জীবনের মৌলিক এবং গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা ও আচরণ সম্পর্কে দিকনির্দেশনা প্রদান করে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ঈমান, তাকওয়া, সৎকর্ম, দোয়া, তওবা, এবং ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো।
৪০ হাদীসের ফাযায়েল :
যে ব্যক্তি আমার উম্মতের জন্য দ্বীন সম্পর্কিত ৪০- হাদীস সংরক্ষণ করিবে, আল্লাহ তায়ালা তাহাকে ফকীহ বা আলেম করিয়া উঠাইবেন এবং কিয়ামতের দিন আমি তাহার জন্য সুপারিশ করিব ও স্বাক্ষী হইব I (মিশকাত)
৪০ হাদীসের উল্লেখযোগ্য গুণাবলী:
- ইসলামিক শিক্ষা ও নির্দেশনা:
এই হাদীসগুলো ইসলামের মৌলিক নীতিগুলো পরিষ্কারভাবে তুলে ধরে। যেমন, ঈমানের বিষয়, আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক, মানুষের সঙ্গে ভাল আচরণ ইত্যাদি। - সাধারণ জীবনে প্রয়োগ:
এসব হাদীস আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রযোজ্য। এরা আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করতে সাহায্য করে, যেমন: সৎকর্ম, আল্লাহর রহমত লাভ, এবং সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা। - আধ্যাত্মিক অগ্রগতি:
আল্লাহর দয়া এবং ক্ষমা অর্জন করার পথ প্রদর্শন করে। তওবা এবং নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার উপদেশ দেয়। - একত্ব ও সহানুভূতির প্রচার:
মানবতার প্রতি সহানুভূতি ও ইসলামিক সমাজের ভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধি করে। মুসলিমদের একে অপরের প্রতি সদয়, সহানুভূতিশীল এবং সাহায্যপ্রবণ হতে উৎসাহিত করে। - আত্মসচেতনতা:
হাদীসগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, একজন মুসলিমের প্রতিদিনের কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হওয়া উচিত। সব কিছুই আল্লাহর উদ্দেশ্যে হতে হবে। - মহান পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি:
যারা হাদীসগুলো অনুসরণ করে তাদের জন্য জান্নাত এবং আল্লাহর বিশেষ রহমতের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। - ইসলামী শিষ্টাচার:
সামাজিক, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত জীবনে শিষ্টাচার এবং ইসলামী মূল্যবোধ অনুসরণের গুরুত্ব বোঝায়।
৪০- হাদীস
১ নং হাদীস:
“ নিশ্চয় কাজের ফলাফল বা ছাওয়াব নিয়তেরই উপর নির্ভরশীল” (বুখারী, মুসলিম)
২নং হাদীস:
দ্বীনের ইলম অন্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয বা অবশ্যই কর্তব্য । (বুখারী)
৩ নং হাদীস-
তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি যে কোরআন মাজীদ শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয় (মুসলিম)
৪ নং হাদীস-
পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ বা অর্ধেক (তাবরানী)
৫ নং হাদীস:
ক্বিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার নামাজেরই হিসাব হইবে (দারেমী)
৬ নং হাদীস:
নামাজ বেহেস্তের চাবি(মেশকাত, দারেমী)
৭ নং হাদীস-
العلماء وراسات الأنبياء
আলেমগনই পয়গাম্বর গনের ওয়ারেছ বা উত্তরাধিকারী (আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)
৮ নং হাদীস-
مجلس فيه حيه من عبادة ستین سنه
ইলমে দ্বীন চর্চার একটি মজলিস ষাট বৎসর নফল এবাদত করা অপেক্ষায় ও অধিক উৎকৃষ্ট (জামে ছগীর)
৯ নং হাদীস-
তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা ছোট ব্যক্তি হইতে আমার মর্তবা যত বড় আবেদের চেয়ে একজন আলেমের মর্তবা তত বড় (তিরমিযি)
১০ নং হাদীস-
اذ ا جا ء الموت لطالب العلام وهو على هذه الحالة مات وهو شهيد
যে ব্যক্তি কোরআন হাদিছের এলম হাছেল করার মধ্যে মশগুল থাকা অবস্থায় মারা যায়, সে শহীদের দরজা পাইবে। (তিরমিজি)
১১ নং হাদীস-
দোয়া সকল এবাদতের মগজ (বুখারী, মুসলিম)
১২নং হাদীস-
আল্লাহ ঐ ব্যক্তির প্রতি রহম করেন না, যে মানুষের উপর রহম করেনা l (বোখারী)
১৩ নং হাদীস-
খাটি মুসলমান ঐ ব্যক্তি যাহার হাতের দ্বারা, মুখের দ্বারা অন্য কোন মুসলমানের কষ্ট হয় না (বুখারী, মুসলিম)
১৪ নংহাদীস-
দুনিয়ার মহব্বত সমস্ত গুনাহের মূল (মিশকাত)
১৫ নংহাদীস-
আল্লাহ তায়ালার নিকট সবচেয়ে প্রিয় জায়গা মসজিদ এবং সবচেয়ে খারাপ জায়গা বাজার (বুখারী, মুসলিম)
১৬ নং হাদীস-
শেষ আমলই গ্রহনযোগ্য( শেষ ভাল যার সব ভাল তার) (মুসলিম)
১৭নং হাদীস-
যাহা শুনে তাহাই বলতে থাকা মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য ইহাই যথেষ্ট (বায়হাক্বী)
১৮নং হাদীস-
ঈমানদার দেয় জন্য মৃত্যু তোহ্ফা বা উপহার স্বরুপ । (বাইহাক্বী)
১৯নং হাদীস-
হারাম ভক্ষন কারী দেহ বেহেস্তে প্রবেশ করিবে না I (বুখারী, মুসলিম)
২০নং হাদীস-
যে ঘরে কুকুর এবং জীবের ছবি থাকে, ঐ ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না I (তিরমিযি)
২১ নংহাদীস-
তোমরা অধিক পরিমানে স্বাদ বিনষ্টকারী মৃত্যুকে স্বরন কর! (বুখারী)
22 নং হাদীস-
আমার পক্ষ হইতে একটি কথা হইলেও পৌছাইয়া দাও। (তিরমিযি)
২৩ নং হাদীস-
منَ ساكت نجا
যে চূপ থাকে সে নাজাত পায় (বুখারী, মুসলিম)
২৪ নংহাদীস-
টাখনুর যে অংশ পায়জামা অথবা লুঙ্গী দ্বারা আবৃত থাকিবে উহা দোজখে যাইবে l
২৫ নং হাদীস-
من سترمسلم ستره الله يوم القيامة
যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের আয়েবকে গোপন রাখিবে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা ও তাহার আয়েব গোপন রাখিবেন I (বুখারী, মুসলিম)
২৬ নং হাদীস-
انَا خاتم النبيين لا نبى بعد ي
আমিই শেষ নবী, আমার পরে আর কোন নবী আসিবে না (বুখারী)
২৭ নং হাদীস
كُنْ في الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيبٌ أو عَابِرُ سَبِيلٍ
দুনিয়াতে একটি মুছাফির অথবা পথিকের ন্যায় থাক ।(জামে ছগীর)
২৮ নংহাদীস
الدال عل ى الخير كفاعله
যে ব্যক্তি ভাল কাজে পথ দেখায়, সে ব্যক্তি ঐ ভাল কাজ করনে ওয়ালার মত ছাওয়াব পায় ( বুখারী, মুসলিম)
২৯ নংহাদীস
الدُّنْيَا سِجْنُ الْمُؤْمِنِ، وَجَنَّةُ الكَافِرِ
দুনিয়া মুমিনের জন্য জেলখানা আর কাফিরের জন্য বেহেস্ত(মুসলিম)
৩০ নং হাদীস-
لا تتخذوا لقبو ر مسا جد
কবরগুলিকে তোমরা সিজদার স্থান বানাইওনা (মুসলিম)
৩১ নং হাদীস-
كل بدعة ضلالة وكل ضلالة في النا ر
ধর্মে সকল নতুন আবিষ্কার পথভ্রষ্ঠতা বা গোমরাহী আর যত সব গোমরাহী সবই জাহান্নামী I (মুসলিম্)
৩২নং হাদীস-
لا يدخل الجنة من لايأ من جاره بوائقه
যে লোকের প্রতিবেশী তাহার ফাসাদ হইতে নিরাপদ নয় সে বেহেশতে প্রবেশ করিতে পারিবেনা। (বুখারী, মুসলিম)
৩৩ নং হাদীস-
যখন তুমি লজ্জা ত্যাগ করিবে, তখন যা ইচ্ছা তাহাই করিতে পার । (বুখারী, মুসলিম)
৩৪ নং হাদীস-
ان من احب كما الى احسن كم اخلاقا
তোমাদের মধ্যে সেই লোকই আমার নিকট অধিকতর প্রিয়, যে অধিকতর চরিত্রবান (তিরমিযি)
৩৫ নং হাদীস-
مَنْ يُحْرَمِ الرِّفْقَ يُحْرَمِ الخير كله
যে ব্যক্তির স্বভাবে নম্রতা নেই সে সর্বপ্রকার কল্যাণ হইতে বঞ্চিত।(বুখারী, মুসলিম)
৩৬ নং হাদীস-
لاَ يُلْدَغُ الْمُؤْمِنُ مِنْ جُحْرٍ وَاحِدٍ مَرَّتَيْنِ
মুমিন একই গর্তে দুইবার দংশিত হয়না l(বুখারী, মুসলিম)
৩৭ নং হাদীস-
الا غنى غنى النفس
সত্যিকার ধনী আত্মা বা মনের ধনী I (মুসলিম)
৩৮ নং হাদীস-
المسلم اخو المسلم
মুসলমান মুসলমানের ভাই(বুখারী)
৩৯ নং হাদীস-
من صلى على واحدة صلى الله عليه عشرآ
যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তাহার উপর দশবার রহমত নাজেল করেন l
৪০ নং হাদীস-
أَبْغَضَ الرِّجَالِ إِلَى اللهِ الْأَلَدُّ الْخَصِمُ
ঝগড়াটে ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট অধিক ক্রোধের পাত্র (জামে- ছগীর)