বর্তমানে বিদ্যুৎ বিহীন একটি দিনও কল্পনা করা যায় না। আমাদের নিত্যদিনের জীবনে প্রতিনিয়ত বাড়ছে বিদ্যুতের ব্যবহার I বিদ্যুৎ ব্যবহার ও মেরামতের কাজে খুব সাবধানতা অবলম্বন করতে হয় । অজ্ঞতা ও অসচেতন কারণে ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা কেড়ে নিতে পারে মূল্যবান জীবন । তাই বৈদ্যুতিক লাইনে কাজ করার সময় সরকারি বিধিবিধান ও যথাযথ নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করার গুরুত্ব অপরিসীম ।
বৈদ্যুতিক সার্কিটে ব্যবহৃত প্রতীকসমূহ:
বৈদ্যুতিক সার্কিটের উপকরনসমূহ সংক্ষেপে এবং সহজে বুঝানোর জন্য নানা ধরনের প্রতীক ব্যবহার করা হয়। নকশা বা ড্রয়িং এর মধ্যে ইলেকট্রিক্যাল ফিটিংস – ফিক্সার এবং সরঞ্জামাদির অবস্থান দেখানোর জন্য যে সমস্ত বিশেষ ধরনের সংকেত ব্যবহার করা হয় তাদের কে ইলেকট্রিক্যাল সার্কিটের প্রতীক হিসাবে গন্য করা হয়।বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম স্থাপন ও মেরামতের কাজে যারা নিয়োজিত থাকেন তাদের অবশ্যই এসব প্রতীক সম্পর্কে ধারনা থাকতে হবে।
বৈদ্যুতিক সার্কিটে ব্যবহৃত প্রতীকসমূহের তালিকা:-
বৈদ্যুতিক সার্কিটের প্রতীকসমূহ ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা:
ড্রয়িং হলো প্রকৌশলীর ভাষা। তাই ড্রয়িং বা নকশা দেখে বৈদ্যুতিক স্থাপনার যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদন করা হয়। ড্রয়িং বা নকশা তে ইলেকট্রিক্যাল ফিটিংস- ফিক্সার ও সরঞ্জামসমূহ বুঝানোর জন্য বিভিন্ন প্রতীকগুলো ব্যবহৃত হয় যা দেখে প্রকৌশলী বা টেকনিশিয়ান গন যাবতীয় স্থাপনার কাজ সম্পাদন করে। তাই বলা যায় যে বৈদ্যুতিক সার্কিট এর জন্য প্রতীকসমূহ ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম ।
বৈদ্যুতিক সার্কিটের প্রতীকসমূহ ব্যবহারের নমুনা:
বৈদ্যুতিক সার্কিটে অসংখ্য প্রতীক ব্যবহৃত হয়। সার্কিট ড্রয়িং-এ প্রতীকসমূহের ব্যবহার এর বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। কিছু কিছু সরঞ্জামের পোলারিটি আছে । ফলে নেগেটিভের জায়গায় পজিটিভ বসালে যন্ত্রটির ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । নিচে সার্কিট ড্রয়িং-এ কয়েকটি বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের প্রতীক দেখানো হয়েছে।
বৈদ্যুতিক কারেন্ট ও ভোল্টেজ:
কারেন্ট ও ভোল্টেজ বিদ্যুতের দুটি গুরুত্বপূর্ণ রাশি। কারেন্ট শব্দের অর্থ প্রবাহ । বৈদ্যুতিক কারেন্টের অর্থ হলো বিদ্যুৎ আধান বা ইলেকট্রিক চার্জের প্রবাহ I অর্থাৎ কোন একটি পরিবাহীর একক ক্ষেত্রফলের মধ্য দিয়ে একক সময়ে যে পরিমান চার্জ প্রবাহিত হয় তাকে তড়িৎ প্রবাহ বা কারেন্ট বা বৈদ্যুতিক কারেন্ট বলে I ইহাকে ( I )দ্বারা প্রকাশ করা হয়, ইহার একক অ্যাম্পিয়ার I
সূত্র- কারেন্ট= চার্জ/ সময়,
I=Q/t অ্যাম্পিয়ার
পরিবাহী তারের মধ্যে ইলেক্ট্রন বা চার্জকে প্রবাহিত করানোর জন্য যে চাপ বা বলপ্রয়োগ করা হয় তাকে ভোল্টেজ বা বৈদ্যুতিক চাপ বলে I ইহাকে V দ্বারা প্রকাশ করা হয়, ইহার একক Volt I ব্যাটারি, জেনারেটর, ট্রান্সফরমার প্রভৃতির সাহায্যে বিভব পার্থক্য বা ভোল্টেজ সৃষ্টি করা যায়। প্রযুক্ত ইলেকট্রিক বল বা চাপের কারণেইলেকট্রনগুনে পরিবাহীর নিম্ন ভোল্টেজ প্রান্ত থেকে উচ্চ ভোল্টেজ প্রান্তের দিকে অগ্রসর হয়। এইভাবে পরিবাহীতে বিদ্যুৎ প্রবাহের সৃষ্টি হয়।
ইলেকট্রিক কারেন্ট ও ভোল্টেজের প্রকার ভেদ:
ইলেকট্রিক কারেন্ট ও ভোল্টেজ দুই প্রকার যথাঃ
১. অলটারনেটিং কারেন্ট
2. ডাইরেক্ট কারেন্ট
অলটারনেটিং কারেন্ট : যে কারেন্ট প্রবাহিত হওয়ার সময় দিক পরিবর্তন করে তাকে অল্টারনেটিং কারেন্ট বলে । পাওয়ার সোর্সের আউটপুট পোলারিটি সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়৷
ডাইরেক্ট কারেন্ট: যে কারেন্ট সব সময় এক দিকে প্রবাহিত হয় তাকে ডাইরেক্ট কারেন্ট বলে। ভোল্টেজ উৎসের পজেটিভ ও নেগেটিভ পোলারিটি অপরিবর্তীত থাকায় কারেন্টের দিক পরিবর্তিত হয়না।
বৈদ্যুতিক সার্কিটে এ্যামিটার ও ভোল্টমিটারের সংযোগ চিত্র: সার্কিটের যে অংশের ভোল্টেজ মাপা হবে তার সাথে ভোল্টমিটার কে প্যারালালে সংযোগ দেয়া হয়। আবার সার্কিটের যে অংশের কারেন্ট মাপা হবে তার সাথে এ্যামিটারকে সিরিজে সংযোগ করতে হয়।
পরিবাহীর রেজিস্ট্যেন্স: রেজিস্ট্যান্স হচ্ছে পরিবাহীর একটি বিশেষ ধর্ম । পরিবাহীর যে ধর্মের জন্য এর মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয় তাকে রেজিস্ট্যান্স বা রোধ বলে। প্রত্যেক পদার্থের কম-বেশী রেজিস্ট্যান্স বা রোধ আছে । ইহাকে R দ্বারা প্রকাশ করা হয়, এর একক হলো ওহম ।
রেজিস্ট্যান্সের প্রকারভেদ:
ওহমের সূত্র: নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোন পরিবাহীর ভিতর দিয়ে প্রবাহিত কারেন্ট উক্ত পরিবাহীর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্যের সমানুপাতিক এবং রেজিস্ট্যান্সের এর ব্যাস্তানুপাতিক বা উল্টানুপাতিক । অর্থাৎ- I∞ V/R
ওহমের সূত্রের গানিতিক ব্যাখ্যা:
মনে করি,
A B পরিবাহীর দুই প্রান্তের বিভব যথাক্রমে VA ও VB I
পরিবাহীর রেজিস্ট্যান্স R এবং এর ভিতর দিয়ে প্রবাহিত কারেন্ট I
পরিবাহীর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য= VA – VB= V [ ধরি]
ওহমের সূত্রানুসারে,
I∞ V………….1no [ যখন R স্থির]
এবং I∞ 1/R………2no [যখন V স্থির]
1no ও 2no হতে পাই, I∞ V/R [ যখন V ও R উভয়ই পরিবর্তনশীল]
বা, I=K.V/R……….3no [এখানে K একটি ধ্রুবক]
এখন K এর মান 1 হলে 3no সমীকরণ থেকে পাই,
I=V/R
ইহাই ওহমের সূত্রের গানিতিক ব্যাখ্যা ।
কারেন্ট, ভোল্টেজ ও রেজিস্ট্যেন্স এর মধ্যে কার সম্পর্ক:
যদি কোন পরিবাহীর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য V, পরিবাহীর রেজিস্ট্যান্স R এবং এর ভিতর দিয়ে প্রবাহিত কারেন্ট I হয়, তবে ওহমের সূত্রানুসারে V, I ও R এর মধ্যেকার সম্পর্ক হচ্ছে-
গানিতিক সমস্যা ও সমাধান:
একটি৬০ Watt বাতির রেজিস্ট্যান্স ৮০৭ ওহম I বাতিটিকে 220 volt সরবরাহের সাথে সংযুক্ত করলে উহার মধ্য দিয়ে কী পরিমাণ কারেন্ট প্রবাহিত হবে।
সমাধান:
দেওয়া আছে, P= ৬০ watts,
V=220V,
R= ৮০৭ ওহমস,
I= ?
আমরা জানি, প্রবাহিত কারেন্ট, I= V/R
=220/৮০৭
= . 272 অ্যাম্পিয়ার (উত্তর)
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
- কারেন্ট কি
- কারেন্ট পরিমাপের আন্তজার্তিক একক কি?
- ভোল্টেজ কি এবং এর একক কি?
- রেজিস্ট্যান্স এর ব্যবহারিক একক কি?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
- ওহমের সূত্রটি লিখ।
2) ভোল্টেজ Vএর মান স্থির থাকলে কারেন্ট (I) এর মানের কী পরিবর্তন হবে যদি-
ক. রেজিস্ট্যন্স R এর মান অর্ধেক হয়,
খ. রেজিস্ট্যান্স Rএর মান দ্বিগুন করা হয়।
রচনামূলকপ্রশ্ন
১. কারেন্ট, ভোল্টেজ এবং রেজিস্ট্যান্স এর একক ও প্রতীকসহ সংজ্ঞা দাও
২. ওহমের সূত্রটি বর্ণনা এবং ব্যাখ্যা দাও
৩. একটি ৬০ watt এর বাতির রেজিস্ট্যান্স ৮০৭ ওহমস I বাতিটিকে 220 ভোল্ট সরবরাহের সাথে যুক্ত করলে উহার মধ্য দিয়ে কী পরিমান কারেন্ট প্রবাহিত হবে